নমস্কার হিন্দু শাস্ত্র জ্ঞান ইউটিউব চ্যনেলে আপনাকে স্বাগত জানাই । আজকের এই ভিডিওটিতে জানবেন - কেন পতিতালয়ের মাটি দিয়ে গড়া হয় দুর্গা দেবীর প্রতিমা ।
একদিকে পবিত্রতা, শুভ্রতার প্রতিমূর্তি মা দুর্গা, অন্যদিকে তাঁর মূর্তি তৈরিতেই দরকার হয় তথা কথিত ‘অশুচি’, ‘অপবিত্র’ এলাকার মাটির ৷ এক পুজো চলে যেতেই শুরু হয়ে যায় পরের বছরের পুজোর প্রস্তুতি ৷ পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই কুমোরপাড়ায় ব্যস্ততা ওঠে তুঙ্গে ৷ কাদা মাখা শিল্পী হাত থামতেই চায় না যেন ৷ মৃন্ময়ীরূপে জেগে ওঠেন মা দুর্গা ৷ একমেটে, দোমেটে থেকে ধাপে ধাপে পূর্ণ অবয়বে ফুটে ওঠেন তিনি ৷ কিন্তু শাস্ত্র বলে সেই আদলকে ফুটিয়ে তুলতে কয়েকটি জিনিস আবশ্যক ৷ যেমন, গাভীর মূত্র, গোবর, ধানের শিস, পবিত্র গঙ্গার জল, তাছাড়া রয়েছে রাজদরবারের মাটি, চৌমাথার মাটি, গজদন্ত মৃত্তিকা, নদীর দুই তীরের মাটি, গঙ্গামাটি আর নিষিদ্ধপল্লীর মাটি ।
দেবী দুর্গার নয়টি রূপকে আমরা নব দূর্গা রূপে পূজা করে থাকি, কিন্তু জানেনকি এই নবদুর্গার প্রতিমা তৈরিতে নবম মাটি সংগ্রহ করা হয় পতিতালয় থেকে ৷ আর সেই কারণেই সেই পুরাকাল থেকে আজও দেবীর মূর্তি তৈরিতে দরকার হয় বেশ্যালয়ের মাটি ৷ কিন্তু কেন এই রীতি ?
সমাজে যাঁদের দূরে ঠেলে দিয়েছে, অবজ্ঞা আর বঞ্চনার পাহাড় জমে উঠেছে যাঁদের দেওয়াল বেয়ে, ঘৃণা আর নোংরা দৃষ্টি ছাড়া যাঁদের ভাগ্যে আর কিছুই জোটেনি তাঁদের ঘরের মাটিই আবার দেবীমূর্তির অপরিহার্য অঙ্গ ৷ কিন্তু কেন ?
এই প্রথার পিছনে রয়েছে মূলত তিনটি কারণ -
পতিতালয়ের মাটি পুণ্যে ভরা -
বলা হয়, পুরুষ মানুষ পতিতালয়ে গিয়ে যখন বারাঙ্গনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন, এবং যৌনাচারে লিপ্ত হন, তখন তিনি জীবনে সঞ্চিত সমস্ত পুণ্য সেখানেই ফেলে আসেন ৷ আর সংগ্রহ করেন ঘড়া ভর্তি পাপ ৷
চিরাচরিতভাবে মানুষ বিশ্বাস করেন যে, মানুষের মধ্যে যে কামনা, বাসনা, লালসার বাস। পতিতারা তা নিজেদের মধ্যে নিয়ে নেন। তাঁরা নিজেদের অশুদ্ধ, অপবিত্র করে সমাজকে শুদ্ধ রাখতে চান। পবিত্র রাখতে চান। ফলে হাজার হাজার পুরুষের পুণ্যে বেশ্যালয়ের মাটি হয়ে ওঠে পবিত্র ৷ সে কারণেই এই মাটি দিয়ে গড়তে হয় দেবী মূর্তি ৷
তাছাড়া হিন্দু পুরাণে বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে পতিতাদের ক্ষমতা নাকি দেবতাদের থেকেও বেশি কারণ ঋষি বিশ্বামিত্র যখন ইন্দ্রত্ব লাভের জন্য কঠোর তপস্যায় ব্রতী হয়েছিলেন তখন তার ধ্যান ভঙ্গ করার জন্য দেবরাজ ইন্দ্র, তার দরবারের সব থেকে সুন্দরী নর্তকী মেনকাকে পাঠান । মেনকার নৃত্যের ফলে বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভঙ্গ হয় । তাই দেবরাজ ইন্দ্র সর্বশক্তিমান হয়েও যা পারলেন না সামান্য নারী হয়ে, মেনকা তা হেলায় করে ফেললো । সেই কারণেই শক্তি স্বরূপা, জগৎজননী মা দুর্গার মূর্তি তৈরিতে এই পতিতালয়ের মাটি এক অপরিহার্য উপাদান ।
মূলত এই আচার থেকে বোঝানো হয় যে, নারী মায়ের জাতি। নারীর ওরসেই পুরুষের জন্ম। নারীকে পতিতা বানায় পুরুষরাই। তাই ঐ পুরুষরাই অপবিত্র। মায়ের প্রতিমা তৈরীতে পতিতালয়ের মাটি দিতে হয় অর্থাৎ যাঁরা এই পরিস্থিতির শিকার তাঁদের সন্মান করতে হবে। নারী কোখনো অপবিত্র হতে পারে না এই ধারণাটিই লুকিয়ে থাকে এই রীতির আড়ালে ৷
শরৎকালের হয় দেবীর অকালবোধন । এইসময় মহামায়া নটি রূপে পূজিত হন । মা দুর্গা যেহেতু সমগ্র নারী শক্তির প্রতিক তাই এই রীতিটির মাধ্যমে, পতিতাকেও সমগ্র নারী জাতির এক অঙ্গ হিসেবে দেখা হয় ।
তাই দুর্গাপুজোয় অষ্ট কন্যার ঘরের মাটি নেবার পর নবম কন্যা হিসেবে পতিতালয়ের মাটি সংগ্রহ করা হয় ।
এই নব কন্যা হলেন নর্তকী বা অভিনেত্রী, কাপালিনি, ধোপানি, নাপিতানি, ব্রাহ্মণী, শূদ্রাণী, গোয়ালিনী, মালিনী ও পতিতা । আর দূর্গা পূজার মূল উদ্দেশ্য যেহেতু নারীজাতিকে সম্মান দেখানো তাই পতিতাকেও এখানে সম্মান দেখানোর রীতি আদিকাল থেকেই চলে আসছে ।
আমাদের আজকের পোস্টটি ভালো লাগলে, শেয়ার করার অনুরোধ রইলো ।
কাল হাজির হবো আরো কিছু নতুন তথ্য এবং কিছু নতুন জ্ঞান নিয়ে ।
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । আপনার দিনটি শুভ হোক ।
একদিকে পবিত্রতা, শুভ্রতার প্রতিমূর্তি মা দুর্গা, অন্যদিকে তাঁর মূর্তি তৈরিতেই দরকার হয় তথা কথিত ‘অশুচি’, ‘অপবিত্র’ এলাকার মাটির ৷ এক পুজো চলে যেতেই শুরু হয়ে যায় পরের বছরের পুজোর প্রস্তুতি ৷ পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই কুমোরপাড়ায় ব্যস্ততা ওঠে তুঙ্গে ৷ কাদা মাখা শিল্পী হাত থামতেই চায় না যেন ৷ মৃন্ময়ীরূপে জেগে ওঠেন মা দুর্গা ৷ একমেটে, দোমেটে থেকে ধাপে ধাপে পূর্ণ অবয়বে ফুটে ওঠেন তিনি ৷ কিন্তু শাস্ত্র বলে সেই আদলকে ফুটিয়ে তুলতে কয়েকটি জিনিস আবশ্যক ৷ যেমন, গাভীর মূত্র, গোবর, ধানের শিস, পবিত্র গঙ্গার জল, তাছাড়া রয়েছে রাজদরবারের মাটি, চৌমাথার মাটি, গজদন্ত মৃত্তিকা, নদীর দুই তীরের মাটি, গঙ্গামাটি আর নিষিদ্ধপল্লীর মাটি ।
দেবী দুর্গার নয়টি রূপকে আমরা নব দূর্গা রূপে পূজা করে থাকি, কিন্তু জানেনকি এই নবদুর্গার প্রতিমা তৈরিতে নবম মাটি সংগ্রহ করা হয় পতিতালয় থেকে ৷ আর সেই কারণেই সেই পুরাকাল থেকে আজও দেবীর মূর্তি তৈরিতে দরকার হয় বেশ্যালয়ের মাটি ৷ কিন্তু কেন এই রীতি ?
সমাজে যাঁদের দূরে ঠেলে দিয়েছে, অবজ্ঞা আর বঞ্চনার পাহাড় জমে উঠেছে যাঁদের দেওয়াল বেয়ে, ঘৃণা আর নোংরা দৃষ্টি ছাড়া যাঁদের ভাগ্যে আর কিছুই জোটেনি তাঁদের ঘরের মাটিই আবার দেবীমূর্তির অপরিহার্য অঙ্গ ৷ কিন্তু কেন ?
এই প্রথার পিছনে রয়েছে মূলত তিনটি কারণ -
পতিতালয়ের মাটি পুণ্যে ভরা -
বলা হয়, পুরুষ মানুষ পতিতালয়ে গিয়ে যখন বারাঙ্গনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন, এবং যৌনাচারে লিপ্ত হন, তখন তিনি জীবনে সঞ্চিত সমস্ত পুণ্য সেখানেই ফেলে আসেন ৷ আর সংগ্রহ করেন ঘড়া ভর্তি পাপ ৷
চিরাচরিতভাবে মানুষ বিশ্বাস করেন যে, মানুষের মধ্যে যে কামনা, বাসনা, লালসার বাস। পতিতারা তা নিজেদের মধ্যে নিয়ে নেন। তাঁরা নিজেদের অশুদ্ধ, অপবিত্র করে সমাজকে শুদ্ধ রাখতে চান। পবিত্র রাখতে চান। ফলে হাজার হাজার পুরুষের পুণ্যে বেশ্যালয়ের মাটি হয়ে ওঠে পবিত্র ৷ সে কারণেই এই মাটি দিয়ে গড়তে হয় দেবী মূর্তি ৷
তাছাড়া হিন্দু পুরাণে বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে পতিতাদের ক্ষমতা নাকি দেবতাদের থেকেও বেশি কারণ ঋষি বিশ্বামিত্র যখন ইন্দ্রত্ব লাভের জন্য কঠোর তপস্যায় ব্রতী হয়েছিলেন তখন তার ধ্যান ভঙ্গ করার জন্য দেবরাজ ইন্দ্র, তার দরবারের সব থেকে সুন্দরী নর্তকী মেনকাকে পাঠান । মেনকার নৃত্যের ফলে বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভঙ্গ হয় । তাই দেবরাজ ইন্দ্র সর্বশক্তিমান হয়েও যা পারলেন না সামান্য নারী হয়ে, মেনকা তা হেলায় করে ফেললো । সেই কারণেই শক্তি স্বরূপা, জগৎজননী মা দুর্গার মূর্তি তৈরিতে এই পতিতালয়ের মাটি এক অপরিহার্য উপাদান ।
মূলত এই আচার থেকে বোঝানো হয় যে, নারী মায়ের জাতি। নারীর ওরসেই পুরুষের জন্ম। নারীকে পতিতা বানায় পুরুষরাই। তাই ঐ পুরুষরাই অপবিত্র। মায়ের প্রতিমা তৈরীতে পতিতালয়ের মাটি দিতে হয় অর্থাৎ যাঁরা এই পরিস্থিতির শিকার তাঁদের সন্মান করতে হবে। নারী কোখনো অপবিত্র হতে পারে না এই ধারণাটিই লুকিয়ে থাকে এই রীতির আড়ালে ৷
শরৎকালের হয় দেবীর অকালবোধন । এইসময় মহামায়া নটি রূপে পূজিত হন । মা দুর্গা যেহেতু সমগ্র নারী শক্তির প্রতিক তাই এই রীতিটির মাধ্যমে, পতিতাকেও সমগ্র নারী জাতির এক অঙ্গ হিসেবে দেখা হয় ।
তাই দুর্গাপুজোয় অষ্ট কন্যার ঘরের মাটি নেবার পর নবম কন্যা হিসেবে পতিতালয়ের মাটি সংগ্রহ করা হয় ।
এই নব কন্যা হলেন নর্তকী বা অভিনেত্রী, কাপালিনি, ধোপানি, নাপিতানি, ব্রাহ্মণী, শূদ্রাণী, গোয়ালিনী, মালিনী ও পতিতা । আর দূর্গা পূজার মূল উদ্দেশ্য যেহেতু নারীজাতিকে সম্মান দেখানো তাই পতিতাকেও এখানে সম্মান দেখানোর রীতি আদিকাল থেকেই চলে আসছে ।
আমাদের আজকের পোস্টটি ভালো লাগলে, শেয়ার করার অনুরোধ রইলো ।
কাল হাজির হবো আরো কিছু নতুন তথ্য এবং কিছু নতুন জ্ঞান নিয়ে ।
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । আপনার দিনটি শুভ হোক ।
0 Comments